নবদূত রিপোর্ট:
মুক্তিযুদ্ধে হারিয়ে যাওয়া স্বজনদের স্মরণে নারীপক্ষ ১৯৮৮ সাল থেকে বিজয় দিবসের আগে আয়োজন করে আসছে ‘আলোর স্মরণে কাটুক আঁধার’ অনুষ্ঠান। এ অনুষ্ঠানে এবারের প্রতিপাদ্য বিষয় ‘একাত্তরের যুদ্ধসন্তানদের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি’ দাবি।
এ দাবি নিয়ে শুক্রবার রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে সন্ধ্যা ৫.৩০ মিনিটের সময় নারীপক্ষ মুক্তিযুদ্ধে হারিয়ে যাওয়া স্বজনদের স্মরণে বেদীতে মোমবাতি জ্বালিয়ে এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বলীয়ান হয়ে প্রতিটি মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠায় ব্রতী হওয়ার অঙ্গীকার করে।
নারীপক্ষের পক্ষ থেকে পেশ করা দুটি দাবি হলো:
১. বিদেশে অবস্থানরত সকল যুদ্ধ সন্তানকে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব গ্রহণ করার জন্য সরকারের পক্ষ থেকে উন্মুক্ত আহবান জানানো হোক।
২. রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতির মাধ্যমে দেশে বসবাসরত যুদ্ধ সন্তানদের পরিচয়কে সম্মানসূচক স্থানে অবস্থান স্থাপন করা।
নারীপক্ষের সদস্য কামরুন নাহারের আহবানে দলীয়গান ‘আগুনের পরশমণি ছোঁয়াও প্রাণে’ ‘গৌরী শৃঙ্গ তুলেছে শির’ ও মোমবাতি প্রজ্বলন করে সাংস্কৃতিক সংগঠন জলতরঙ্গ। ঘোষণাপত্র পাঠ করেন নারীপক্ষের সদস্য রেহানা সামদানী কণা, ‘জন্ম থেকে জ্বলছি মাগো’ গান পরিবেশন করেন সোমা দাস, ‘আমরা যুদ্ধ শিশু’ বই থেকে আবৃত্তি করেন আসমাউল হুসনা আঁখি, আবু জাফর উবায়দুল্লাহর ‘আমি কিংবদন্তির কথা বলছি’ কবিতা পাঠ করেন ভাস্বর বন্দোপাধ্যায়। এছাড়া মুক্তিযুদ্ধের সময়ের বিভিন্ন স্মৃতিচারণ করেন মুক্তিযোদ্ধা এবং যুদ্ধ সন্তানেরা।
ঘোষণাপত্র পাঠকালে রেহানা সামদানী কণা বলেন, মুক্তিযুদ্ধের প্রত্যাশা ছিল একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা,যেখানে ন্যায়, নীতি ও ইনসাফ হবে একটি মূল মন্ত্র এবং যে রাষ্ট্রে প্রতিটি মানুষের জীবনের অধিকার সংরক্ষিত থাকবে। কিন্তু দুর্ভাগ্য যে, স্বাধীনতার ৫০ বছরেও আমাদের সেই প্রত্যাশিত রাষ্ট্রটি প্রতিষ্ঠিত হয়নি। এটা অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় যে, আমাদের যুদ্ধ সন্তানেরা আজও নিজ দেশে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতিটুকু পায়নি। স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তির প্রাক্কালে আমরা (নারীপক্ষ) সরকারের কাছে দাবি জানাচ্ছি, দত্তকসূত্রে বিদেশে অবস্থানরত সকল যুদ্ধসন্তানকে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব গ্রহণ করার জন্য উন্মুক্ত আহ্বান জানানো হোক এবং রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতির মাধ্যমে দেশে বসবাসরত যুদ্ধসন্তানদের পরিচয়কে
সম্মানসূচক অবস্থানে স্থাপন করা হোক।
তিনি আরো বলেন, আমাদের কাছে এই যুদ্ধ সন্তানদের জীবনের কথা ও পরিবার সম্পর্কে কাছে পর্যাপ্ত তথ্য নেই, তবু তাদের সম্পর্কে যেটুকু তথ্য জানা আছে সেটুকুর মানবিক মর্যাদা সমুন্নত রেখে ও ব্যক্তিগত জীবনের গোপনীয়তা রক্ষা করে তাদের জন্ম অধিকার, তাঁদের মাতৃভূমি বাংলাদেশের সঙ্গে সংযুক্ত হবার একটি সুনির্দিষ্ট পথ তৈরি করা প্রয়োজন বলে মনে করি।
এই পথ তৈরির জন্য সকল অধিকারভিত্তিক সংগঠন এবং সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের একত্রে দাঁড়ানোর আহ্বান জানান রেহানা সামদানী কণা।