নবদূত রিপোর্ট:
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের(ঢাবি) সংস্কৃত বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী কানিজ ফাতেমা স্বামী নজরুল ইসলাম কর্তৃক যৌতুকের জন্য নির্যাতনের শিকার হয়ে শাহবাগ থানায় মামলা করলে পুলিশের অসহযোগিতার অভিযোগ এনে প্রতিবাদ জানিয়ে মানববন্ধন করেছে।
বুধবার(৯ফেব্রুয়ারি) দুপুর সাড়ে ১২টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে সংস্কৃত বিভাগ,বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থী,বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধসভা ও ডিবেটিং সোসাইটির ব্যানারে এই মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
এসময় বক্তারা পুলিশি অসহযোগিতা নিন্দা জানিয়ে অতিদ্রুত সুষ্ঠু বিচার দাবি করেন। এবং সুষ্ঠু বিচার নিশ্চিতে প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
সংস্কৃত বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ও ছাত্র পরামর্শক ড. চন্দনা রানী বিশ্বাস বলেন,’কানিজ ফাতেমা আমাদের একজন ভদ্র মার্জিত আচরণের শিক্ষার্থী। কিন্তু তার সাথে ঘটেছে জঘন্য ঘটনা। কানিজ যখন আমাদের কাছে আসে তখন তার গলা ও পিঠে আঘাতের চিহ্ন দেখতে পাই। ওই সময় সে না আসলে হয়ত তাকে মেরে ফেলতো। তারপর সে যখন শাহবাগ থানায় মামলা করতে যায় তখন তাকে সহযোগিতা না করে হেনস্তা করা হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তানের কপালে এই দুঃখ। তাহলে সাধারণ মানুষের কপালে কী অবস্থা! একবিংশ শতাব্দীতে এটি খুবই দুঃখজনক ঘটনা। অবিলম্বে নজরুল ইসলামকে গ্রেফতার করে বিচারের আওতায় আনতে হবে। অন্যথায় এরকম নির্যাতনের ঘটনা ঘটতেই থাকবে।’
সহযোগী অধ্যাপক কালিদাস ভক্ত বলেন,আজকের এই প্রগতিশীল যুগে এসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষার্থী যৌতুকের জন্য নির্যাতনের শিকার হচ্ছে, এর চেয়ে জঘন্য ঘটনা আর কি হতে পারে। দেশে বিচারহীনতার সংস্কৃতির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। এর বিরুদ্ধে আমাদের সোচ্চার হতে হবে। কানিজকে যৌতুকের জন্য গলায় বড় পিন ডুকিয়ে দেয়া হয়েছে। সে আমাদেরকে তার মেডিকেল সার্টিফিকেট দেখিয়েছে। এসময় তিনি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে পদক্ষেপ নিয়ে অভিযুক্ত স্বামী নজরুল ইসলামকে গ্রেফতার করে বিচারের আওতায় আনার দাবি জানান।
সমাবেশে ভুক্তভোগী কানিজ ফাতেমা বলেন,যারা বিচারের সাথে সংশ্লিষ্ট তারা বিষয়গুলো পক্ষপাতহীনভাবে দেখবেন এবং বিচার করবেন। কিন্তু সেট হচ্ছে না এবং আজ আমাকে এখানে এসে বিচার চাইতে হচ্ছে। আমি বিয়েতে রাজি না জেনেও আমার পরিবারের মাধ্যমে আমাকে চাপ প্রয়োগ করে বিয়ে করেন। আমাকে নানাভাবে অত্যাচার করে এবং আমি দুইমাসের মাথায় আত্মহত্যার চেষ্টা করি। তারপর তেমন কোনো নির্যাতনের শিকার হয়নি। এরপর ২০২০সালে যখন জুডিশিয়ারি আবাসিক প্রকল্প আসার পর আমার কাছে ১০লাখ টাকা দাবি করে। তার বক্তব্য সে যদি জুডিশিয়ারি প্রকল্প রাখে তাহলে সে তার বাবা মাকে টাকা দিতে পারবে না। তার জন্য আমার বাবা-মাকে সে টাকা দিতে হবে৷ আমি না করে দিলে অকথ্য ভাষায় মানসিক ও শারীরিক নির্যাতন চালায় আমার ওপর। ২০১৬সালে আমাদের বাড়িতে আমার বাবা-মায়ের সামনে সে আমাকে নির্যাতন করে। এরপর সে আমাকে নিয়মিত মারতো। প্রায় প্রতিদিন রাতে মারতো,ওইটা ঘর না জাহান্নাম আমি বলতে পারব না। তার দাবির প্রেক্ষিতে আমার বাবা-মা তাকে প্রায় চার লক্ষ টাকা দেয়। একপর্যায়ে তারা টাকা দিতে নিষেধ করে দেয়। তার এই ধরনের ব্যাবহার করে দেখে আমার বাবা আমার নামে জমিন কিনে দেয়। ২০২১সালের ২৯আগষ্ট সে আমার কাছে ওই জমির দলিল চাইলে আমি দিতে অস্বীকার করি তখন সে আমাকে অশ্রাব্য ভাষায় গালি দেয়। পরদিন সকালে ওঠে আমাকে তিন দাপে মারে। এসব কিছু নিয়ে যখন আমি মামলা করতে যায় তখন পুলিশ অসহযোগিতা করেন এবং বিভিন্নভাবে সময় ক্ষেপণ করেন। আমি প্রধামন্ত্রীর কাছে সুষ্ঠু বিচার দাবি করছি।