Saturday, September 21, 2024
Homeসারাদেশকোটচাঁদপুরে বোরো চাষে বেড়েছে খরচ

কোটচাঁদপুরে বোরো চাষে বেড়েছে খরচ

নবদূত রিপোর্টঃ

ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুরে শুরু হয়েছে বোরো ধান লাগানো। তবে বোরো ধান চাষে বৃদ্ধি পেয়েছে খরচ। জমি প্রস্তুত করতে ডিজেলচালিত মেশিন, কীটনাশক ও ধান লাগানো শ্রমিকের মজুরিসহ দাম বৃদ্ধি পেয়েছে বলে জানান কৃষকরা। তারা জানিয়েছেন, গত মৌসুমের তুলনায় ফসলের উৎপাদন খরচ ২৫-৩০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।
এতে করে উপজেলার অনেক কৃষকই বোরো আবাদ থেকে থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন।

বোরো আবাদের খরচ বেড়ে যাওয়ার প্রভাব ধানের বাজার এবং চালের বাজারে পড়বে বলে আশঙ্কা সংশ্লিষ্টদের।
কোটচাঁদপুরে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের দেওয়া তথ্য, চলতি মৌসুমে উপজেলায় এবার ৫৫৫ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। ইতোমধ্যে মাঠে মাঠে কৃষকরা তাদের মাঠ প্রস্তুত করে বোরো ধানের আবাদ করতে শুরু করেছেন। কেউবা বীজতলা থেকে চারা সংগ্রহ করছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, মৌসুমের শুরুতেই চাষিদের খরচ করতে হচ্ছে অতিরিক্ত টাকা। বিশেষ করে ডিজেলে দাম বাড়ায় বেড়েছে চাষিদের সেচ খরচ। সেই সঙ্গে বীজ, সার ও শ্রমিকের পিছনেও গুনতে হচ্ছে অতিরিক্ত টাকা। এমনকি টাকা দিয়েও সময়মতো শ্রমিক পাওয়া যাচ্ছে না বলে অভিযোগ কৃষকদের।

কৃষকদের সঙ্গে কথা হলে তারা জানান, যেভাবে সবকিছুর দাম বেড়েছে তাতে বিঘাপ্রতি জমিতে আগের তুলনা তাদের কয়েক হাজার টাকা বেশি খরচ হবে। সব মিলিয়ে ব্যয় বেড়ে যাবে ২৫-৩০ শতাংশ। আর এই খরচ পোষাতে হলে তাদের বেশি দামে ধান বিক্রি করতে হবে।
উপজেলার বহরমপুর গ্রামের কৃষক নজরুল ইসলাম। তিনি জানান, চলতি মৌসুমে তিনি তিন বিঘা জমিতে বোরো ধানের আবাদ করছেন। বেশিরভাগ জমিতেই চারা রোপণ শেষ হয়েছে। বোরিংয়ের মাধ্যমে সেচ দেওয়া লেগছে। ডিজেলের দাম বাড়ায় সেচ খরচ আগের তুলনায় বেশি নিচ্ছে। আবার শ্রমিকের মজুরিও বেশি।
কৃষক লিটন হোসেন বলেন, এ মৌসুমে ধান লাগানোর জন্য মাঠ প্রস্তুত করা থেকে শুরু করে সবকিছুতেই আগের তুলনায় অতিরিক্ত খরচ হচ্ছে। গত বছর যেখানে ১ বিঘা জমির চারার দাম ছিল ৫০০-৭০০ টাকা, এবার সেই চারা কিনলাম ১৫০-২০০০ টাকা দিয়ে। শুধু চারার পেছনে অতিরিক্ত লাগল ১৫শ টাকা।
তিনি আরো বলেন, ‘গত বছর ডিজেলের দাম ছিল ৬৫ টাকা লিটার, সেই তেল এবার ৮০ টাকায় কেনা লাগছে। আবার গ্রামের খুচরা দোকানগুলোতে সেই তেল বিক্রি হচ্ছে ৮৪ টাকায়।

বোরোর আবাদ কমেছে জানিয়ে এই কৃষক বলেন, ‘খরচ বেড়ে যাওয়ার কারণে গতবার বোরো আবাদ করা অনেক চাষিই এবার ধানের আবাদ না করে অন্য আবাদ করছে। আবার যারা করেছে তারা গতবারের তুলনায় কম জমিতে আবাদ করেছেন। বোরোর জমিতে এবার তারা ভুট্টার আবাদ করছেন।


রফিক নামের আরেক কৃষক বলেন, ‘সার, বীজ ও তেলের দাম সরকার যেভাবে নির্ধারণ করে দেয় গ্রামের খুচরা বাজারে তার চাইতে বেশি দামে কিনতে হয়। গ্রামের অধিকাংশ কৃষক আবাদ করেন কোনো না কোনো দোকান থেকে বাকিতে। ফসল উঠলে তারা সেই বাকির টাকা পরিশোধ করেন। এই সুযোগ নিয়ে গ্রামের ওইসব অসাধু ব্যাবসায়ী চাষিদের জিম্মি করে ইচ্ছেমতো দাম বেশি রাখে। এতে করে কৃষকরা আরো বেশি ক্ষতির সম্মুখীন হন। বিশেষ করে ইউরিয়া এবং নন ইউরিয়া কোনো সারই সঠিক দামে পাওয়া যায় না।


কোটচাঁদপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোঃ মহাসিন আলী বলেন, ‘ডিজেলের দাম এবং শ্রমিকের মজুরি বেড়ে যাওয়ায় ধান আবাদের খরচ আগের চাইতে অনেকটাই বেড়েছে। যার প্রভাব অবশ্যই ধানের বাজারে পড়বে। তবে লাগানো খরচ বাড়লেও ধান কাটা ও মাড়াইয়ের জন্য আমরা কৃষকদের কম্বাইন্ড হারবেস্টার মেশিন দিয়ে সহযোগিতা করছি। তাতে কৃষকের ধান কাটা এবং মাড়াই করার খরচ অনেকটাই কমে যায়।


গতবারের চাইতে চলতি বোরো মৌসুমে আবাদের খরচ কিছুটা বাড়লেও আবাদের পরিমাণ কমেনি। ধানের দাম ভালো থাকায় কৃষকরা অবশ্যই লাভবান হবেন। কৃষকদের সবসময় পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।

RELATED ARTICLES

Most Popular