নবদূত রিপোর্ট:
দীর্ঘ ২৮ বছর পর সর্বশেষ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্রসংসদ নির্বাচন হয়েছিল ২০১৯ সালের ১১ই মার্চে। এসময় নির্বাচনের ধারাবাহিকতা বজায় রাখার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন উপাচার্য অধ্যাপক ড. আখতারুজ্জামান। যদিও সর্বশেষ নির্বাচনের পর চার বছর পদার্পন করছে ডাকসু। তবুও নতুন করে নির্বাচনের বিষয়ে কোন প্রস্তুতিই নিচ্ছে না বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
এদিকে, দীর্ঘদিন ধরে ডাকসু নির্বাচন না হওয়ায় ক্ষুব্ধ ক্যাম্পাসের ক্রিয়াশীল ছাত্রসংগঠনগুলো। এরই মধ্যে নির্বাচনের দাবিতে কয়েকটি ছাত্রসংগঠন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে বিভিন্নসময় স্মারকলিপি প্রদান করেন। এসময় প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাদেরকে নির্বাচনের আশ্বাস দেওয়া হয়। তবুও নির্বাচনের বিষযে কোন অগ্রগতি দেখা যাচ্ছে না।
নির্বাচন নিয়ে নানা আলোচনা সমালোচনা থাকলেও এটির ধারাবাহিকতা বজায় রাখা নিয়ে কারো দ্বীমত নেই। সকল ছাত্র সংগঠনই চায় প্রতিবছরই নিয়ম মেনে ডাকসু নির্বাচন হোক। নির্বাচনের চার বছর পুরণ হলেও আবারো নির্বাচন আয়োজন না করায় সেটা করার দাবি দিন দিন জোরালো হচ্ছে। স্বারকলিপিতে কাজ না হওয়ায় ইতিমধ্যে কিছু সংগঠন বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসজুড়ে নির্বাচন আয়োজনের দাবিতে দেয়াল-লিখন, পোস্টারিং, হ্যান্ডবিল বিতরণসহ বিভিন্ন কর্মসূচীও পালন করছে।
বাংলাদেশ ছাত্রলীগ, জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট, ছাত্র ইউনিয়ন, ছাত্র ফেডারেশন, ছাত্র অধিকার পরিষদসহ ক্রিয়াশীল সকল সংগঠনের নেতারা অতিদ্রুত নির্বাচন আয়োজন করার ব্যাপারে জোর দেন।
ডাকসুর ব্যাপারে ছাত্রলীগ ইতিবাচক দাবি করে দলটির ঢাবি শাখার সাধারণ সম্পাদক ও ডাকসুর সাবেক এজিএস সাদ্দাম হোসেন বলেন, আমরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে অনবরত জানাচ্ছি ডাকসু দেওয়ার জন্যে। বিশেষ করে শতবর্ষের মুহূর্তে নির্বাচিত ছাত্র নেতৃত্ব প্রয়োজন। ডাকসু নির্বাচনের মধ্য দিয়ে ছাত্র রাজনীতিতে যে ইতিবাচক পরিবর্তন এসেছে সেই পরিবর্তনের ধারা অব্যহত রাখা প্রয়োজন। ডাকসু হওয়ার কারণে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণতান্ত্রিক পরিবেশ ফিরে এসেছে, শিক্ষার্থীদের মধ্যে গণতান্ত্রিক মুল্যবোধ জন্ম নিয়েছে এবং ছাত্রসংগঠনগুলোর মধ্যে ভালো কাজের প্রতিযোগিতা তৈরী হয়েছে। ডাকসু নির্বাচন দেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনগত বাধ্যবাধকতা। সেকারণে আমরা চাই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন দ্রততম সময়ের মধ্যে সকল প্রস্ততি সম্পন্ন করে ডাকসু নির্বাচন আয়োজন করবে।
শুধু নির্বাচন হলেই হবেনা বরং নির্বাচনের পরিবেশও সমুন্নত রাখতে হবে দাবি করে ছাত্রদলের ঢাবি শাখার আহবায়ক রাকিবুল ইসলাম রাকিব বলেন, ছাত্রদল ডাকসু নির্বাচনের পক্ষে। খুব দ্রুততম সময়ের মধ্যে ডাকসু নির্বাচনের দাবি জানাই। কিন্তু আমরা বিগত ডাকসু নির্বাচনের মত কারচুপি ও জাতীয় নির্বাচনের ন্যায় ভোটচুরির নির্বাচনের বিরুদ্ধে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে অবশ্যই নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করতে হবে এবং সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে সাধারণ শিক্ষার্থীদের মতামতকে বাস্তবায়ন করতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে আমরা সৌজন্য সাক্ষাৎ এবং পরিবেশ পরিষদের মিটিং এর মাধ্যমে ডাকসু নির্বাচনের দাবি জানিয়েছি কিন্তু সত্যিকার অর্থে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কোন উদ্যোগ দৃশ্যমান নয়। ছাত্রদল অতি দ্রুত ক্যাম্পাসে সকল ছাত্র সংগঠনের জন্য সমান অধিকার চায় এবং সুষ্ঠু ভোটের মাধ্যমে ডাকসু নির্বাচন চায়।
নির্বাচন নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কি কি করা উচিৎ সেটা নিয়ে বিস্তারিত কথা বলেন সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের ঢাবি শাখার সভাপতি সালমান সিদ্দিক। তিনি বলেন, শিক্ষার্থীরা আগেও ডাকসু নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলন করেছে, ডাকসু আদায়ও করেছে। কিন্তু ভোটের নামে হয়েছে জালিয়াতি আর পেশিশক্তির প্রদর্শন। হলগুলো ছাত্রলীগের দখলে এবং নির্বাচনের কেন্দ্র হলগুলোতে হলে নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না। তাই আমাদের দাবি, অনুষদগুলোতে যেন নির্বাচন দেয়া হয়। এতে হলের এবং হলের বাইরের শিক্ষার্থীরা নির্ভয়ে ভোট দিতে পারবে। আগের নির্বাচনে, আগের রাতে ছাত্রলীগের প্রার্থীদের পক্ষে ব্যালটে সীল মেরে ব্যালট বাক্স ভর্তি করা, অন্য প্যানেলের প্রার্থীদের ভোট দিতে বাধা প্রদান, নির্দিষ্ট প্রার্থীদের পক্ষে ভোট দিতে চাপ প্রয়োগ, লাইনে কৃত্রিম জটলা তৈরী করে রাখা, ভয়-ভীতি প্রদান সবই ছিলো।এভাবেই ছাত্রদের ভোটাধিকার হরণ করা হয়েছে। তাই শুধু নির্বাচন নয়। ভোট যেন ডাকাতি না হয় সেদিকেও নজর রাখতে হবে, ছাত্রদের প্রতিরোধ গড়তে হবে।
ছাত্র ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় সভাপতি মো. ফয়েজউল্লাহ বলেন, আমরা বরাবরের মতোই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে দাবী জানিয়ে আসছি ডাকসুর জন্য। গত একুশে ফেব্রুয়ারির আগেও পরিবেশ পরিষদের মিটিংয়ে আমরা জানিয়েছিলাম। উপাচার্য বলেছিলেন, তারা আলোচনা করবেন। আমরা শুধু নির্বাচনই চাই না একইসাথে হলগুলোতে সব সংগঠনের কর্মীদের সমান অধিকার নিশ্চিত করে সুষ্ঠু নির্বাচনেরও দাবি জানাই।
ছাত্র অধিকার পরিষদের ঢাবি শাখার সাধারণ সম্পাদক আকরাম হোসেন বলেন, ডাকসু শিক্ষার্থীদের অধিকার। এই অধিকার থেকে বঞ্চিত করাটা বেআইনি। ডাকসু থাকলে শিক্ষার মান থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক পরিস্থিতির উন্নয়ন হয়। আমরা মনে করি শতবর্ষের ঢাবি ডাকসু ছাড়া অসম্পূর্ণ। শিক্ষার মান ও ঢাবির হারানো গৌরব ফিরিয়ে আনতে ডাকসুর কোনো বিকল্প নাই।
সকল ছাত্র সংগঠনগুলো নির্বাচন চাইলেও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কেন নির্বাচন আয়োজন করতে চাইছে না বা পারছে না এটা নিয়ে নানান জল্পনা কল্পনা চললেও আশা ছেড়ে দেননি কেউ। কয়েকদিন আগে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও ডাকসুর সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান বলেছিলেন, সুষ্ঠু গণতান্ত্রিক পরিবেশ পেলেই ডাকসু নির্বাচন পুণরায় আয়োজন করা হবে।
তার এই কথার প্রেক্ষিতে ছাত্রনেতারা এরকম পরিবেশ বলতে আসলে তিনি কি বুঝিয়েছেন বা সেই পরিবেশ কবে ফিরবে নাকি আদৌ ফিরবে না সেটা জানতে চান।