নবদূত রিপোর্ট,:
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক শিক্ষার্থী ৩০০০ টাকা দিয়ে পুরো মাস চলে। হলের বাহিরে থেকে পড়াশোনা করা তাদের পক্ষে সম্ভব না। এ দূর্বলতাকে পূঁজি করেই আমাদের প্রোগ্রাম-গেস্টরুম করানো হয়। প্রতিনিয়তই ইমিডিয়েট সিনিয়রদের গেস্টরুম নির্যাতনের শিকার হয়েও আমাদের হলে অবস্থান করতে হয়। এটি যেন একটি আদালত।
শুক্রবার (১১ মার্চ) রাতে ছাত্রলীগের গেস্টরুম নির্যাতনের শিকার হয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী আবু তালিব এসব কথা বলেন। সে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাধ বিজ্ঞান বিভাগের ২য় বর্ষের শিক্ষার্থী।
নির্যাতনের বিষয়ে এই শিক্ষার্থী বলেন, গতকাল (১০ মার্চ) রাত ১২টার পর আমাকে মিনি গেস্টরুম ডাকা হয়। একপর্যায়ে সামান্য একটা ভুলের কারণে আমাকে হাতে না ধরে মুখে সিগারেট খাইতে বাধ্য করে। আমি খেতে না চাইলে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেতেছিলো। যদি সিগারেট না খাই তাহলে রুমের ভেতর বসিয়ে রেখে সিগারেট খাওয়ানোর থ্রেট দেয়। বাধ্য হয়ে সিগারেট খেতে গিয়ে হাতে ধরতে চাইলে স্টাম্প দিয়ে হাতে আঘাত করে। জোর করে সিগারেট খাওয়ানোর পাশাপাশি আমার শারীরিক গঠন ও হাটা চলা নিয়ে মাদকাসক্ত হিসেমে ব্লেম করে এবং বকাবকি করে। অভিযুক্ত (শান্ত) মুখে সিগারেট দিয়ে তাতে আগুন লাগিয়ে টানতে বলে। একপর্যায়ে সিগারেটের ধোঁয়ার কারণে আমি নিঃস্বাস নিতেও পারিনি।
আবু তালিব আরো বলেন, আমাকে নির্যাতনের পর অন্যান্য বন্ধুদেরও বিভিন্ন ধরণের গালাগালি করে। গেস্টরুম রাত একটায় শেষ হওয়ার পরে আমি কাপড় চোপড় গুছিয়ে হল থেকে বের হয়ে যেতে চাইলে বন্ধুরা আমার জিনিসপত্র রেখে দেয়৷ রাতে আমি হল থেকে বাহিরে চলে যাই পরে রাত তিনটায় বন্ধুরা আমাকে হলে নিয়ে আসে। সকালবেলা বন্ধুদের মাধ্যমে বড়ভাইয়েরা বাঁধন ও শান্ত (অভিযুক্ত) ঘুম থেকে ডাকিয়ে তুলে নিয়ে বাহিরে নিয়ে আসে। আর আমাকে রাতের ঘটনা যেন বাহিরে কাউকে না বলি এব্যাপারে সতর্ক করে দেয়।
এখন পর্যন্ত ২৫ জন শিক্ষার্থী হল ছেড়েছে উল্লেখ করে এই শিক্ষার্থী বলেন, বঙ্গবন্ধু হল ছাত্রলীগের সভাপতি মেহেদী হাসান শান্ত ভাইয়ের গ্রপে সপ্তাহে তিনদিন সাধারণ গেস্টরুম এবং চার/পাঁচবার করে মিনি গেস্টরুম নেয়া হয়। প্রতিদিন কেউ না কেউ নির্যাতনের শিকার হয়, কেউ ভয়ে মুখ খুলতে পারে না। আমাদের বর্ষের আমরা শুরুতে ৭৫ জন ছিলাম, এখন ৪৫ জন আছি। ২৫ জন নির্যাতনের কারণে হল ছেড়ে দিয়েছে। আরো অনেকে হল ছেড়ে দেওয়ার পরিকল্পনা করছে।
হল প্রশাসনের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে এই শিক্ষার্থী বলেন, ভর্তি হওয়ার আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে নিয়ে আমরা যে স্বপ্ন দেখেছিলাম, সেটি এখন দুঃস্বপ্নে পরিণত হয়েছে। আমাদেরকে নিয়মিত নির্যাতন করে কিন্তু হল প্রশাসন দেখেও না দেখার ভান করে থাকে। প্রভোস্ট, হাউজ টিউটর উনারা নামে মাত্র প্রশাসন। বাস্তবে তারা পুতুল, ছাত্রলীগের হাতে জিম্মি। তাদের রেখে সরকারের টাকার অপচয় ছাড়া কিছু নয়।
হলে থাকার ইচ্ছেপোষণ করে আবু তালিব বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে মুক্তবুদ্ধি বলে যে একটা কথা আছে, সেটা তো দূরে থাক। আমরা স্বাভাবিক জীবনযাপনও করতে পারি না। আমি হলে থাকতে চাই, আমি হলকে মিস করি। প্রশাসনকে লিখিতভাবে জানিয়েছি, দেখি প্রশাসন কোনো পদক্ষেপ নেয় কিনা।
এর আগে গতকাল বৃহস্পতিবার (১০ মার্চ) গভীর রাতে হলের ২০১ (ক) নং কক্ষে আবু তালিবকে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে একই হলের ২০১৮-১৯ সেশনের চারজন ছাত্রলীগ কর্মীর বিরুদ্ধে। তারা হলেন, সমাজকল্যাণ বিভাগের শেখ শান্ত আলম, ইসলামের ইতিহাস বিভাগের ইমদাদুল হক বাঁধন, তথ্য বিজ্ঞান ও গ্রন্থাগার ব্যবস্থাপনা বিভাগের শাহাবুদ্দিন ইসলাম বিজয় এবং আইন বিভাগের নাহিদুল ইসলাম ফাগুন। সংবাদ সম্মেলনেও এই চারজনের নির্যাতনের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ভুক্তভোগী এই শিক্ষার্থী।