নবদূত রিপোর্টঃ
কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ীতে ৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালে অ্যাম্বুলেন্স থাকলেও চালক না থাকায় দীঘ ১৪ মাস ৪ দিন ধরে অ্যাম্বুলেন্স সেবা থেকে বঞ্চিত ফুলবাড়ীবাসী। ফলে চরম-ভোগান্তিতে পড়েছেন অসুস্থ-রোগী-স্বজনসহ উপজেলার হাজারও মানুষ।
এতে অসুস্থ রোগীকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বাধ্য হয়ে উচ্চ মূল্যে মাইক্রোবাস-প্রাইভেটকারসহ বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া করে কুড়িগ্রাম-রংপুর-মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ বিভিন্ন বেসরকারি ক্লিনিক -হাসপাতালে ছুঁটছেন রোগী ও স্বজনরা।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, ২০২১ সালের ১৩ জানুয়ারি তৎকালীন উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. সামছুন্নাহারসহ অপর একজন ডাক্তারের সরকারি কোয়াটারে চুরি সংঘটিত হয়। কোয়াটারের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে চুরির সঙ্গে জড়িত থাকার অপরাধে ৪ জনকে আটক করে পুলিশ।
নির্দেশ দাতা হিসাবে হাসপাতালের অ্যাম্বুলেন্স চালক একাব্বর আলী (৪৫)কেও আটক করা হয়। পরে পাঁচ জনের বিরুদ্ধে চুরির মামলা দায়ের করে তাদেরকে কুড়িগ্রাম জেল হাজতে পাঠায় পুলিশ। চুরির নির্দেশ দাতা হিসাবে আটক অ্যাম্বুলেন্স চালক একাব্বর আলীকে ২০২১ সালের জানুয়ারি মাসের ১৩ তারিখেই সাময়িক বরখাস্ত করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। সেই থেকে গ্যারেজে তালাবদ্ধ অবস্থায় পরে আছে অ্যাম্বুলেন্স। ২০২১ সালের ১১ই এপ্রিল অ্যাম্বুলেন্স চালক একাব্বর আলী কারাগার থেকে জামিনে বেরিয়ে আসলেও বরখাস্তকৃত ওই চালক দিয়ে অ্যাম্বুলেন্স চালার নিয়ম নেই বলে জানিয়েছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
ফুলবাড়ী সদর ইউনিয়নের চন্দ্রখানা এলাকার এমদাদুল হক মিলন ও আমিনুল ইসলামসহ অনেকেই জানান, কয়েকদিন আগে আমার নিকটতম এক আত্মীয় গুরুতর অসুস্থ হলে তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার জন্য ফুলবাড়ী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে অ্যাম্বুলেন্স নিতে আসলে আসলে ১৪ মাস ধরে চালক না থাকায় বাধ্য হয়ে বাড়তি মুল্য দিয়ে বে-সরকারী অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া করে রংপুরে নিয়ে যায়। তিনি দ্রুত অ্যাম্বুলেন্স চালক দেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে জোড় দাবী জানান। নাওডাঙ্গা ইউনিয়নের আব্দুল জলিল ও কাসেম আলী জানান, অ্যাম্বুলেন্সের চালক না থাকায় আমরা রোগীর স্বজনরা চরম বিপাকে পড়েছি। বাধ্য হয়ে অতিরিক্ত টাকা দিয়ে মাইক্রোবাস ভাড়া করেই অসুস্থ রোগীকে রংপুর নিয়ে যাচ্ছি। তারা আরও জানান, অ্যাম্বুলেন্সে অক্সিজেন আছে অনেক সুবিধা, খরচও অনেক কম। মাইক্রোবাসে অক্সিজেন নাই খরচও অনেক বেশি। আমরা অনেক চরম দুর্ভোগ সহ্য করছি। ১৪ মাস অতিবাহিত হলেও কর্তৃপক্ষ অ্যাম্বুলেন্স চালকের ব্যবস্থা না করায় চরম ক্ষোভ জানিয়েছেন।
বরখাস্তকৃত অ্যাম্বুলেন্স চালক একাব্বর আলী জানান, চলতি বছরের ১৩ জানুয়ারি তৎকালীন উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. সামছুন্নাহার আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র মূলক করে চুরির নির্দেশ দাতা হিসাবে মামলা দিয়েছে। মামলা হওয়ায় একই গত বছরের ১৩ জানুয়ারি আমাকে সাময়িক বরখাস্ত করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। এদিকে ১৪ মাস ধরে পরিবার-পরিজন নিয়ে চরম বিপাকে আছি। তাই ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে এই মামলার নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠ তদন্তের জন্য জোড়দাবী জানাচ্ছি।
এ প্রসঙ্গে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার-পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. সুমন কান্তী সাহা জানান, চালক একাব্বর জামিনে মুক্ত হলেও আদেশ তুলে না নেওয়া পর্যন্ত ঐ চালক দিয়ে অ্যাম্বুলেন্স চালানোর কোন বিধান না থাকায় ২০২১ সালের ১৩ জানুয়ারি থেকে অ্যাম্বুলেন্স তালাবদ্ধ অবস্থায় গ্যারেজে পড়ে আছে। চালক না থাকার বিষয়টি গুরুত্বসহকারে এমপি মহাদয়কে জানানো হয়েছে।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) সুমন দাস জানান, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অ্যাম্বুলেন্স চালক যিনি নিয়োজিত ছিলেন তিনি সাময়িক বরখাস্ত। তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা প্রক্রিয়াধীন আছেন। মামলা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত বর্তমান চালক দিয়ে অ্যাম্বুলেন্স চালার কোন বিধান নেই। চালক আছে এবং নিয়ম অনুযায়ী তিনি বেতন-ভাতাও পাচ্ছেন। যেহেতু চালকের পদটি শূন্য নয়, শূন্য পদ থাকলে এতোদিন ব্যবস্থা হয়ে যেত। তারপরেও বিকল্প চালক নেওয়ার ব্যাপারে উপজেলা প্রশাসন ও স্বাস্থ্য বিভাগ বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে প্রতিনিয়ত চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। আশা করি অল্প সময়ের মধ্যে তা নিরসন হবে বলে আমার বিশ্বাস।