Monday, November 11, 2024
Homeসারাদেশকুষ্টিয়ায় মঙ্গলবার থেকে ছেউড়িয়ায় ৩ দিনের লালন স্মরণোৎসব

কুষ্টিয়ায় মঙ্গলবার থেকে ছেউড়িয়ায় ৩ দিনের লালন স্মরণোৎসব

নবদূত রিপোর্টঃ

মহামারির সংকট কাটিয়ে এবারে আবারও কুষ্টিয়ার ছেঁউড়িয়ায় বসছে দোলপূর্ণিমা উপলক্ষ্যে লালন স্মরণোৎসব। এবারে সাংস্কৃতি মন্ত্রণালয় ও কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় তিন দিনের লালন স্মরণোৎসবের আয়োজন করেছে কুষ্টিয়ার লালন একাডেমি।

‘মানুষ ভজলে সোনার মানুষ হবি’ বাউল সম্রাট ফকির লালন শাহ্ এর এই আধ্যাত্মিক বাণীর স্লোগানে মঙ্গলবার (১৫ মার্চ) থেকে শুরু হয়ে এ উৎসব চলবে বৃহস্পতিবার (১৭ মার্চ) পর্যন্ত।

বাউল সম্রাট লালন শাহ্ তার জীবদ্দশায় ছেঁউড়িয়ার এই আখড়াবাড়িতে প্রতি বছর চৈত্রের দোল পূর্ণিমা রাতে বাউলদের নিয়ে সাধুসঙ্গ উৎসব করতেন।

১২৯৭ বঙ্গাব্দের পহেলা কার্তিক তার মৃত্যুর পরও এ উৎসব চালিয়ে আসছেন তার অনুসারীরা। কিন্তু করোনার কারণে দুই বছর বন্ধ ছিল এ আয়োজন। এবার সাংস্কৃতিক মন্ত্রণালয় ও জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় লালন একাডেমি তিন দিনের এ লালন স্মরনোৎসবের আয়োজন করেছে।
ইতোমধ্যে এ উৎসবকে ঘিরে কুষ্টিয়ার ছেঁউড়িয়ার কালী নদীর তীরে লালন আঁখড়াবাড়িতে চলছে উৎসব ও গ্রামীণ মেলার প্রস্তুতি। সেইসঙ্গে দুই বছর পরে সাধু ভক্তরা লালন মাজারে আসতে পারবেন বলে খুঁশি তারা।

তিন দিনের এ আয়োজনে সাধুদের আনুষ্ঠানিকতার বাইরে আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে আয়োজকরা।

উদ্বোধনী দিন থেকে প্রতিদিন সন্ধ্যা ৬টা ৪৫ মিনিট থেকে লালন মুক্তমঞ্চে আলোচনা সভা এবং পরে বাউল গানের আয়োজন করা হয়েছে।

১৫ মার্চ প্রথম দিনের আলোচনা প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন খুলনার বিভাগীয় কমিশনার মো. ইসমাইল হোসেন, এনডিসি।

বুধবার (১৬ মার্চ) দ্বিতীয় দিনের আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন সাংস্কৃতিক বিষয়ক মন্ত্রণালনের প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ।

বৃহস্পতিবার (১৭ মার্চ) শেষ দিনের আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন কুষ্টিয়া-৩ (সদর) আসনের সংসদ সদস্য মাহাবুব উল আলম হানিফ।

তিন দিনের আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করবেন কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক (ডিসি) ও লালন একাডেমির সভাপতি মো. সাইদুল ইসলাম।

সেই সঙ্গে উৎসব চলাকালীন সময়ে প্রতিদিন আলোচনা সভা শেষে দেশ বরেণ্য লালন গানের শিল্পী, লালন একাডেমির শিল্পীসহ গুণী সংগীত শিল্পীরা গান পরিবেশন করবেন বলে জানা গেছে।

ডিসি সাইদুল ইসলাম জানান, ‘তিন দিনব্যাপী এ লালন স্মরণোৎসবকে ঘিরে ইতোমধ্যে প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। সেইসঙ্গে নিরাপত্তার ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। পুলিশের পাশাপাশি, র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব), সাদা পোশাকে জেলা গোয়েন্দা (ডিসি) পুলিশ এবং নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট দায়িত্বে থাকবেন। ’

কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার ছেঁউড়িয়া গ্রামের এই আখড়াবাড়িই ছিল বাউল সম্রাট ফকির লালন শাহ্ এর প্রধান অবস্থান এবং এখানেই তিনি জীবনের শেষ প্রয়াণ নেন। তবে বর্তমান সেখানে অবকাঠামোগত উন্নয়নের মধ্য দিয়ে গড়ে উঠেছে লালন একাডেমি। এখানে লালন সমাধীস্থলকে স্মরণীয় করতে ১৯৬২ সালে একটি সমাধী সৌধ নির্মিত হয়েছে।

লালন ফকির দীর্ঘ সময়কাল ধরে তার নিজস্ব আত্ম দর্শনের আলোকে ভক্ত আশেকান ও শিষ্যদের নিয়ে যে সব উৎসব মুখর কর্মকাণ্ড করতেন তারই ধারাবাহিকতায় আজও পর্যন্ত দেশ-বিদেশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা ভক্ত-শিষ্য অনুসারীরা পালন করতে বছরের দুইটি দিন যথা দোল উৎসব এবং পহেলা কার্তিক সাঁইজির তিরোধান দিবস পালন করতে মিলিত হয়ে থাকে এই সাধন তীর্থ ছেঁউড়িয়ার আখড়াবাড়িতে। এসব উৎসবে লালনের রেখে যাওয়া মানব মুক্তির সহস্রাধিক আধ্যাত্মিক বাণী সম্বলিত গান গাওয়া হয়। সেইসঙ্গে আখড়াবাড়ি সংলগ্ন কালী গঙ্গা মাঠে বসে উৎসবমুখর গ্রামীণ মেলা।

RELATED ARTICLES

Most Popular