নবদূত রিপোর্টঃ
কুষ্টিয়ার ছেঁউড়িয়ায় বাউল সম্রাট ফকির লালন শাহের স্মরণোৎসবের উদ্বোধন করা হয়েছে।
মঙ্গলবার (১৫ মার্চ) রাতে খুলনা বিভাগীয় কমিশনার মো. ইসমাইল হোসেন প্রধান অতিথি হিসেবে তিন দিনব্যাপী এ উৎসবের উদ্বোধন করেন।
উদ্বোধনী পর্বে বিভাগীয় কমিশনার মো. ইসমাইল হোসেন বলেন, বাউল সম্রাট ফকির লালন সব ধর্মের সীমাবদ্ধতা ছাড়িয়ে সদা সত্য পথে চলতে মানুষকে মানবতাবাদীর পথে ডাক দিয়েছিলেন। তিনি অহিংস মানবতার ব্রত নিয়ে মানুষের কল্যাণে অসংখ্য গান সৃষ্টি করে গেছেন। তার এ অমর সৃষ্টি সঙ্গীত কোনো ধর্মের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল না।
তিনি বলেন, লালন ফকির জাতহীন মানবদর্শন ও মানবতার ভাবধারাকে প্রতিষ্ঠিত করতে একটি অসাম্প্রদায়িক সাম্যের সমাজ চেয়েছিলেন। মানুষকে শিখিয়েছিলেন কোন ধর্মের মধ্যে আবদ্ধ থেকে সম্প্রীতি বজায় রাখা যায় না। সব ধর্মের ওপর মানব ধর্ম। ধর্ম একটি উৎসব। ধর্ম যার যার উৎসব সবার। এ বিষয়টি ভাবতে শিখিয়েছে ফকির লালন সাঁই।
বিভাগীয় কমিশনার বরেন, ফকির লালন এর চিন্তা চেতনায় বিশ্বাসী হয়ে সমাজের সকল প্রকার হানাহানি কাটাকাটি দুর করা সম্ভব। এ মরমী সাধকের প্রাতিষ্ঠানিক কোন শিক্ষা না থাকলেও তিনি ছিলেন আধুনিক সমাজ বিন্যাসে স্ব-শিক্ষিত। তার জ্ঞানের ভান্ডার আর পাঁচজন সাধারণ মানুষের চেয়ে অনেক বেশি ছিল। ধর্ম আর জাতি ভেদাভেদ ভুলে মানুষের কল্যাণে কি অসীম মর্মকথা বলেছেন তিনি। আজকের সমাজের এসব বর্বরতা ও জাতিকে বিভক্তির হাত থেকে বাঁচাতে লালনের মানবতার কল্যানের আর্দশকে গ্রহন করতে হবে।
কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন কুষ্টিয়ার পুলিশ সুপার খাইরুল আলম, স্থানীয় সরকার কুষ্টিয়ার উপ-পরিচালক মৃণাল কান্তি দে, কুষ্টিয়া আদালতের পিপি অ্যাড.আখতারুজ্জামান মাসুম, জেলা জাসদের সভাপতি গোলাম মহসিন, বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কুষ্টিয়া জেলা ইউনিটের সাবেক ডেপুটি কমান্ডার রফিকুল আলম টুকু, বিএমএ কুষ্টিয়ার শাখার সাধারণ সম্পাদক ডা. এ এফ এম আমিনুল হক রতন, দিশার নির্বাহী পরিচালক রবিউল ইসলাম প্রমুখ।
অনুষ্ঠানে প্রধান আলোচক হিসেবে ছিলেন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপ-উপাচার্য ড. মো. শাহিনুর রহমান। আলোচক ছিলেন অ্যাডভোকেট লালিম হক। শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন কুষ্টিয়ার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মো. সিরাজুল ইসলাম। স্বাগত বক্তব্য রাখেন কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের এনডিসি ও লালন একাডেমির অ্যাডহক কমিটির সদস্যসচিব মো. সবুজ হাসান।
অনুষ্ঠানের শুরুতেই আগত অতিথিদের কুষ্টিয়া লালন একাডেমীর পক্ষ থেকে ফুলের তোড়া, ক্রেস্ট ও আত্মশুদ্ধির প্রতীক একতারা উপহার দিয়ে বরণ করে নেন।
আলোচনা শেষে দ্বিতীয় পর্বে লালন মঞ্চে বিভিন্ন শিল্পী ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের সমন্বয়ে লালন সংগীত পরিবেশিত হয়। এতে সংগীত পরিবেশন করেন দেশের খ্যাতিনামা শিল্পীবৃন্দসহ লালন একাডেমির স্থানীয় শিল্পীরা।