আতিকুর, ফুলবাড়ী (কুড়িগ্রাম)প্রতিনিধি:
কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ীতে অনুকূল আবহাওয়া, মানসম্মত বীজ বপন ও কৃষকের নিবিড় পরিচর্যায় পাটের বাম্পার ফলন হয়েছে। আর এবারে বাজারে পাটের ভালো দাম পাওয়ায় সুদিন কাটছে পাট চাষীদের। বাংলাদেশের সোনালী আঁশ খ্যাত পাট চাষ করে কৃষক পরিবারের বইছে উৎসবের আমেজ ।
ধরলা বেষ্টিত ভারতীয় সীমান্ত ঘেঁষা ফুলবাড়ীতে গত কয়েক বছর হতে শুধুমাত্র নদী অববাহিকার কৃষকেরা পাট চাষ করতেন। কিন্তু সোনালী আঁশ পাটের হারানো ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে উপজেলা কৃষি অফিসের তৎপরতায় এবছর উপজেলার প্রতিটি ইউনিয়নে পাট চাষ হয়েছে।এদিকে মৌসুমের শুরুতেই বাজারে নতুন পাট তুলতে শুরু করেছেন চাষীরা। বর্তমানে বাজারে প্রতি মণ পাট ৩ হাজার থেকে ৩ হাজার ৫০০ টাকায় কিনছেন পাট ব্যবসায়ীরা।
উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে দেখা গেছে, পাট কাটা, জাঁক দেয়া ও শুকানোর কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন চাষীরা। সারাদিনের প্রখর রোদে পাট শুকানোর কাজ সহজ হলেও অনাবৃষ্টির কারণে পর্যাপ্ত পানির অভাবে পাট জাঁক দিতে ভোগান্তির কথাও জানিয়েছেন অনেকে।
উপজেলার বড়ভিটা ইউনিয়নের পশ্চিম ধনিরাম গ্রামের কৃষক জোবেদ আলী, আমজাদ হোসেন ও সদর ইউনিয়নের জোতকৃঞ্চহরি গ্রামের প্রবীণ কৃষক আব্দুর রহমান বলেন, গত বছর পাটের ভালো ফলন ও দাম পেয়ে আমরা এবারও পাট চাষ করেছি। আবহাওয়া অনুকূল থাকায় এবারে প্রতিবিঘা জমিতে ১২ থেকে ১৫ মণ পাটের ফলন পেয়েছি।
পাট চাষের আয় ব্যয়ের বিষয়ে কৃষকেরা জানান, এবছর পাট চাষের জন্য সরকারি সহায়তায় বিনামূল্যে বীজ ও সার দিয়েছে। জমি চাষ, নিড়ানি, পাট কাটা, জাঁক দেয়া, ধোয়া ও শুকাতে সব মিলিয়ে বিঘা প্রতি ৭ থেকে ৮ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। এবারে খরচ বাদ দিয়েও প্রতি বিঘা জমিতে উৎপাদিত পাট বিক্রি করে বর্তমান বাজার মূল্যে আমাদের ৪০ হাজারেরও বেশি টাকা লাভ হবে। তাছাড়াও পাটখড়ির (পাটশোলা) ভালো দাম ও চাহিদা থাকায় বাড়তি লাভেরও আশা কৃষকদের।
আর ক্ষুদ্র প্রান্তিক পাট চাষীরা দাম নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, পাট কাটা, জাঁক দেয়া, ধোয়া ও শুকানোর সময়ই আমাদের টাকার প্রয়োজন হয়। উপায়ান্ত না পেয়ে ধার দেনা করে পাট বাড়ীতে আনি। এসময়ে বাজারে পাটের দাম কম থাকে। আর ধার দেনা শোধ করার তাগিদে কম দামেই আমাদের পাট বেচতে হয়। পরে দেখা যায় পাটের দাম দুই তিনগুণ বেশি হয়। আমরা কস্ট করে ফসল উৎপাদন করেও বেশি লাভ করতে পারি না। মৌসুমের প্রথম থেকেই যদি পাটের দাম বেশি থাকতো তাহলে আমরা আরও বেশি লাভবান হতাম। এসময় মৌসুমের শুরুতেই সরকারি ভাবে পাটের ন্যায্য মূল্য নির্ধারণের জন্য যথাযথ কর্তৃপক্ষের নিকট দাবি জানান তারা।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মাহবুবুর রশীদ জানিয়েছেন, চলতি মৌসুমে ফুলবাড়ীতে পাট চাষের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৮৯০ হেক্টর। শেষ পর্যন্ত লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে অধিক প্রায় সাড়ে ১১শ’ হেক্টর জমিতে পাট চাষাবাদ হয়েছে। পাশাপাশি এবারে উপজেলার বিভিন্ন কৃষক গ্রুপের কৃষকদের মাধ্যমে উচ্চ ফলনশীল বিজেআরআই তোষা পাট-১(বারি-১) জাত টি প্রদর্শনী ক্ষেতে চাষ করা হয়েছে। প্রদর্শনী ক্ষেতে বিঘা প্রতি ১৫ মণের মত ফলন পাওয়া গেছে। এছাড়াও এসব প্রদর্শনী ক্ষেত থেকে কৃষকদের মাধ্যমে বীজও উৎপাদন করা হয়েছে। এই উৎপাদিত বীজেই অত্র অঞ্চলের অধিকাংশ কৃষকের বীজের চাহিদা পূরণ করা যাবে। আমরা আগামী মৌসুমে উচ্চ ফলনশীল ও অধিক চাহিদা সম্পন্ন এই জাতের পাট চাষাবাদ করতে কৃষকদের পরামর্শ দিচ্ছি।