নবদূত রিপোর্ট:
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইন্টারনেট ও সফটওয়্যার সেবাদানকারী বহুজাতিক কোম্পানি গুগলে চাকরির জন্য ডাক পেয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) শিক্ষার্থী সাফায়েত উল্যাহ। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল (সিএসই) বিভাগের ২০১৪-১৫ সেশনের (২১ ব্যাচ) শিক্ষার্থী।
গত ৩ সেপ্টেম্বর গুগল থেকে তাকে চাকরির জন্য কনফার্ম করা হয়। গুগলের তাইওয়ান অফিসে ‘গুগল পিক্সেল টিমে’ সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে কাজ করার সুযোগ পেয়েছেন তিনি৷ গুগলে যাওয়ার সুযোগ পেয়ে এক অন্য রকম অনুভূতি কাজ করছে সাফায়াতের। নিজের স্বপ্নের জায়গায় পৌঁছাতে পেরে আনন্দিত তিনি।
সাফায়েতের বাড়ি ফেনী জেলার ছাগলনাইয়া উপজেলার নিজপানুয়া গ্রামে। ফেনীর ছাগলনাইয়া পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক ও ফেনী সরকারী কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক শেষ করে চান্স পান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগের পড়াশোনা শেষ করে বর্তমানে ইনোসিস সল্যুশনস নামে ঢাকার একটি সফটওয়্যার কোম্পানিতে সিনিয়র সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে চাকুরি করছেন তিনি। ডেইলি বাংলাদেশকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে গুগলে চাকরির সুযোগ, নিজের স্বপ্ন ও বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের নানা চড়াই উৎরাইয়ের গল্প নিয়ে কথা বলেন সাফায়েত উল্যাহ।
তিনি বলেন, গত ৩ সেপ্টেম্বর গুগল কর্তৃপক্ষ আমাকে চাকরির বিষয়ে কনফার্ম করে। গুগলের তাইওয়ান অফিসে গুগল পিক্সেল টিমে সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে কাজ করার সুযোগ পেয়েছি। আমার জীবনের স্বপ্নের একটি প্রতিষ্ঠান ছিলো গুগল। কম্পিউটার সাইন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ থেকে পড়াশোনা করা প্রায় সবারই স্বপ্ন থাকে এমন কোন সুযোগ পাওয়ার। সেখানে আমি যেতে পেরেছি এটা আমার অনেক বড় পাওয়া। নিজের অনুভূতি আসলে বলে বুঝানোর মতো না। সব মিলিয়ে অনেক ভালো লাগছে। আর সবচেয়ে বড় ব্যাপার হচ্ছে আমার পরিবারকে এই সুসংবাদ দিতে পেরেছি৷
কৃতজ্ঞতা জানিয়ে সাফায়েত বলেন, সবার আগে আমার মায়ের প্রতি আমি সবসময় কৃতজ্ঞ। আমার মা কে এই সংবাদ দিতে পেরে আমি সবচেয়ে বেশি খুশি হয়েছি। আম্মু, বড় মামা এই দুইজনের সাপোর্ট না থাকলে পড়াশোনাই করতে পারতাম কি-না সন্দেহ। তাদের প্রতি ও আমার শ্রদ্ধেয় শিক্ষকদের প্রতি কৃতজ্ঞতা। আর বন্ধুদের কাছ থেকে অনেক মানসিক সাপোর্ট পেয়েছি সবসময়।
নিজেকে কিভাবে যোগ্য করে গড়া চেষ্টা করেছেন সে বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, নিজেকে সামনের দিনে কেমন দেখতে চাই সেই সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষেত্রে আমি অনেক স্বাধীনতা পেয়েছি। পরিবার সবসময় সাপোর্ট করতো। ছোটবেলা থেকেই নিজের মতো করে পড়াশোনা করতাম। বাবা-মা কোনোদিন চাপ প্রয়োগ করেনি। সবসময় নিজে কোন জিনিসটা করতে পারবো সেটাতেই মনোযোগ দিতাম। আমার সবচেয়ে বেশি আত্মবিশ্বাস তৈরি করেছে- ম্যাথ আর প্রবলেম সলভিং। অষ্টম শ্রেণি থেকেই আমি গণিত অলিম্পিয়াডে অংশগ্রহণ করতাম। আর বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের প্রথমদিক থেকেই নানা কম্পিউটার প্রবলেম সলভিং প্রতিযোগিতায় অংশ নিতাম৷ এসব প্রতিযোগিতায় গিয়ে অনেক অভিজ্ঞতা হয়েছে। নতুন অনেক কিছু শিখতে ও বুঝতে পেরেছি।
সাফল্য : সাফায়েত ২০১৩ এবং ২০১৪ সালে গণিত অলিম্পিয়াডে ফেনী-নোয়াখালী-লক্ষীপুর অঞ্চলের চ্যাম্পিয়ন অফ দ্যা চ্যাম্পিয়ন হয়ে জাতীয় পর্যায়ে অংশগ্রহণ করেন। ২০১৪ সালে জাতীয় পর্যায়ে এসে সেকেন্ড রানার আপ হোন তিনি। পরে বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতায় ২০১৮ সালে গ্রীন ইউভার্সিটিতে প্রোগ্রামিং কন্টেস্ট এ চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করেন। একই বছরে ICPC Dhaka Regional এ ৪র্থ স্থান অর্জন করেন তিনি৷ পরে ভারতের IIT খরগপুরে অনুষ্ঠিত ICPC খড়গপুর রেজিওনালে ১০ম হয়েছিলেন এই ঢাবি শিক্ষার্থী।