Thursday, November 14, 2024
Homeমতামতআলিম-ফাযিল স্তরে বিষয়ভিত্তিক শিক্ষক নিয়োগ ও কিছু বৈষম্য

আলিম-ফাযিল স্তরে বিষয়ভিত্তিক শিক্ষক নিয়োগ ও কিছু বৈষম্য

মতামতঃ

শিক্ষাই আলো। শিক্ষার প্রতিটি স্তরে মানসম্পন্ন শিক্ষক নিয়োগ দেয়া সময়ের দাবি। দেশের সাধারণ শিক্ষার বাংলা মাধ্যম শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের উচ্চ মাধ্যমিক বা স্নাতক পর্যায়ে বাংলা, ইতিহাস, রাষ্ট্রবিজ্ঞান, ইসলাম শিক্ষা, সমাজ বিজ্ঞানসহ অনেক বিষয় বাংলা ভাষায় পড়ানো হলেও প্রতিটি বিষয়ে আলাদা আলাদাভাবে প্রভাষক নিয়োগ দেয়া হয়। কিন্তু মাদরাসার আলিম-ফাযিল স্তরে যিনি আল-কুরআন পড়ান তিনি ‘আরবি প্রভাষক’ আবার যিনি আরবি ভাষা ও সাহিত্য পড়ান তিনিও ‘আরবি প্রভাষক’। এমনিভাবে যিনি হাদিস, ফিকহ, বালাগাত-মানতিক ও ইসলমিক স্টাডিজ পড়ান তিনিও ‘আরবি প্রভাষক’ হিসেবে নিয়োগ লাভ করেন। যদিও এখন ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের পাবলিক ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে প্রতিটি বিষয়ে আলাদাভাবে অনার্স-মাস্টার্স পড়ানো হয়। তো অবাক করার মতো বিষয় হলো! মাদরাসার ফাযিল-কামিল (স্নাতক-স্নাতকোত্তর) ডিগ্রি প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয় উপরোক্ত বিষয়ে আলাদা আলাদা ডিগ্রি প্রদান করলেও শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে সকলেই ‘আরবি প্রভাষক’! কেনো? কেনো এই বৈষম্য?

সরকারের শিক্ষা মন্ত্রনালয়, ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয় ও মাদরাসা শিক্ষার সাথে সংশ্লিষ্ট সকলের নিকট আরবি প্রভাষকদের আবেদন, কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের ন্যায় মাদরাসাতেও যেনো আল-কুরআন, আল-হাদিস, ফিকহ, আরবি ও ইসলামিক স্টাডিজ বিষয়ে আলাদা আলাদাভাবে প্রভাষক নিয়োগের ব্যবস্থা করা হয়।

পরবর্তী আলোচনার বিষয় হলো, প্রভাষকদের পদোন্নতিতে বৈষ্যম্য। ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৯-এ প্রকাশিত শিক্ষা মন্ত্রনালয়ের সর্বশেষ পরিপত্রে উচ্চ মাধ্যমিক কলেজে অধ্যক্ষ বা উপাধক্ষ পদে যোগ্যতা চাওয়া হয়েছে ‘সহকারী অধ্যাপক’ পদে ন্যূনতম তিন বছরের অভিজ্ঞতাসহ ১২ বছরের অভিজ্ঞতা। উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে একজন প্রভাষক যদি পদোন্নতির আনুপাতিক হারের মারপ্যাচে পড়ে কখনো সহকারী অধ্যাপক হতে না পারেন তবে তিনি কলেজ বা আলিম-ফাযিল মাদরাসার অধ্যক্ষ বা উপাধ্যক্ষ হতে পারবেন না। অথচ দুঃখজনক হলেও সত্য যে, পদোন্নতিতে আনুপাতিক হার থাকায় অনেকেই জীবনে সহকারী অধ্যপক বা জ্যেষ্ঠ প্রভাষক হতে পারবেন না। কেননা, উচ্চ মাধ্যমিক বা স্নাতক কলেজ বা মাদরাসার মোট প্রভাষকের মাত্র ৫০শতাংশ সহকারী অধ্যাপক বা জ্যেষ্ঠ প্রভাষক হতে পারেন। সর্বশেষ শিক্ষা নীতিমালা সেটাই বলছে। তবে মাদরাসার এমপিও নীতিমালায় উল্লিখিত নির্দিষ্ট অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে দাখিল মাদরাসার সুপার-সহ সুপারগণ আলিম মাদরাসার অধ্যক্ষ বা উপাধ্যক্ষ হতে পারবেন। কিন্তু পরিতাপের বিষয় হলো, আলিম মাদরাসার প্রভাষকগণ অধ্যক্ষ বা উপাধ্যক্ষ হতে পারবেন না। পদোন্নতির ক্ষেত্রে এটা চরম বৈষম্য বলে মনে করেন মাদরাসার প্রভাষকগণ।

কেননা, যারা আলিম-ফাযিল মাদরাসায় প্রভাষক হিসেবে চাকুরি করছেন, তাদের ডিঙিয়ে নিন্ম স্তরের (দাখিল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের) সুপার ও সহঃ সুপারকে আলিম মাদরাসার প্রশাসনিক পদে (অধ্যক্ষ বা উপাধ্যক্ষ) পদোন্নতি দেয়া হচ্ছে। ফলে অনেক প্রভাষক সারা জীবন কলেজ বা আলিম-ফাযিল মাদারাসায় শিক্ষকতা করেও পদোন্নতি বঞ্চিত হবেন। তাই উচ্চ মাধ্যমিক কলেজ ও আলিম-ফাযিল মাদরাসার প্রভাষকদের দাবি বর্তমান শিক্ষা নীতিমালায় পরিবর্তন এনে প্রভাষকদেরও পদোন্নতির ব্যবস্থা করা হোক এবং বৈষম্যমূলক এই নীতিমালা বাতিল করে শিক্ষকদের সঠিক মূল্যায়ন করা হোক।

বিলাল মাহিনী / পরীক্ষক : ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা। প্রভাষক : গাজীপুর রউফিয়া কামিল মাদরাসা, অভয়নগর, যশোর।
কাজের ক্ষেত্র : কবিতা, প্রবন্ধ-নিবন্ধ, শিক্ষকতা ও সাংবাদিকতা।
bhmahini@gmail.com
০১৮৪৩-৯০৪৭৯০

RELATED ARTICLES

Most Popular